আইনের সংজ্ঞাতেও বৈষম্য আছে
বাংলাদেরে কিছু আইন আছে, যা নারী ও পুরুষকে সমান অধিকার দেয়নি। যেমন দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারামতে, একজন নারী তার স্বামীর জীবদ্দশায় পুনরায় বিয়ে করলে তা একটি গুরুতর অপরাধ হবে এবং এ জন্য ওই নারীর ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিয়েটাও অবৈধ হবে। কিন্তু বাংলাদেশে মুসলিম, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মানুসারী পুরুষরা আইন অনুযায়ী, স্ত্রীর জীবদ্দশায় পুনরায় বিয়ে করতে পারে এবং তা বৈধ বিয়ে হবে। আবার দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারায় ব্যভিচারের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তাও শুধু বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ ধারা অনুযায়ী একজন বিবাহিত পুরুষ অন্য কোনো অবিবাহিত, বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়ালে তা ব্যভিচার হয় না। অপরদিকে একই কাজ একজন নারী করলে তা ব্যভিচার এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই ধারা স্ত্রীকে স্বামীর সম্পত্তি বানিয়েছে।
দেশে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য আইনের এসব অসমতা দূর করা ভীষণ জরুরি। উত্তরাধিকার আইনেও নারী-পুরুষের বৈষম্য রয়েছে। মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে কন্যাসন্তান পুত্রসন্তানের অর্ধেক সম্পত্তি পায়। আবার পুত্র না থাকলে ভাই, ভাইয়ের সন্তান বা দূরের আত্মীয়রা উত্তরাধিকারী হয়। অপরদিকে হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে কন্যা বা স্ত্রীকে শুধু সম্পত্তির ভোগদখলের অধিকার দেওয়া হয়েছে। বিক্রি বা হস্তান্তরের অধিকার দেওয়া হয়নি। দেশে বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারীরা হিন্দু আইন দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় তারাও বৈষম্যের শিকার। উত্তরাধিকার আইনে নারীদের অধিকার কম হওয়ায় আমাদের পরিবার ও সমাজে নারীদের কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। কাজেই উত্তরাধিকার আইনে সমান অধিকার নিশ্চিত করা ব্যতীত নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করা অসম্ভব।
No comments