চাকরি ছাড়ছেন কর্মজীবী মায়েরা!
চাকরি কিংবা ব্যবসা, সবক্ষেত্রে নারীদের এখন সরব উপস্থিতি। তবে কর্মজীবী এই নারীরা সন্তান লালনপালন করতে গিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা না থাকায় কর্মক্ষেত্র ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। সময়ের আবর্তে এখন যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে একক পরিবারে পরিণত হয়েছে। যেসব পরিবারে বয়োজ্যেষ্ঠ কেউ নেই কিংবা সন্তান দেখভাল করার কেউ নেই, সেসব পরিবারের মায়েদের সন্তানের দেখাশোনা করতে গিয়ে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। আর যারা কষ্ট করে চাকরি টিকিয়ে রেখেছেন, তারা দুটি কাজ একসঙ্গে করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠছেন।
বেসরকারি একটি ব্যাংকে কাজ করতেন সুমাইয়া আক্তার। প্রথম সন্তান নেওয়ার পর শাশুড়ির কাছে বছর দুয়েক রেখে অফিস করতে পারলেও, শাশুড়ি অসুস্থ হয়ে পড়ায় শেষ পর্যন্ত সুরাইয়াকে চাকরিটা ছাড়কে হয়েছে। একই অবস্থা মিরপুরের মোমেনা জান্নাতের। তিনি বলেন, বাসার কাছে বা আমার অফিসের পাশেও যদি কোনো শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র থাকত, তাহলে আমার চাকরিটা ছাড়তে হতো না। খুলনার রাইসা আহমেদ বলেন, আমার বাচ্চা দুই বছর হলে আমি একটা বেসরকারি কলেজে কাজ শুরু করি। কিন্তু বছর খানেক যেতে না যেতেই বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে সন্তানকে সময় দিতে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছি।
এ তো শুধু, সুমাইয়া, মোমেনা কিংবা রাইসার গল্প না। সারা দেশে এমন অসংখ্য মায়ের গল্প আছে যাদের সন্তান জন্মের পরে লালনপালন করতে গিয়ে নিজের ক্যারিয়ারে ছাড় দিতে বাধ্য হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে জনগোষ্ঠীর অর্ধেক নারী। সেই অর্ধেক নারীর মধ্যে যারা কর্মক্ষম, তারা যদি কর্মসংস্থান থেকে ঝরে পড়ে তাহলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।
২০১৬-১৭ সালের লেবার ফোর্স সার্ভের হিসাবে—দেশের প্রায় ২ কোটি নারী বিভিন্ন পেশায় জড়িত। কিন্তু এর বিরাট একটি অংশ বাচ্চার লালনপালনের ব্যবস্থা ও ডে কেয়ার না থাকার কারণে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপের তথ্য মতে, দেশে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা ৬ কোটি ১৪ লাখ। এর মধ্যে ১ কোটি ৮৩ লাখ নারী এবং ৪ কোটি ৩১ লাখ পুরুষ। এর মধ্যে দেশে ইতিমধ্যেই শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ কমতে শুরু করেছে। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ৩৬ শতাংশ। ২০১৩ সালে এসে দেখা যায় এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ৫ ভাগে। শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও শ্রমবাজারে তা কমে যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগের।
No comments